“Education is not Preparation of life, rather it is living” শিক্ষা শুধু জীবন প্রস্তুতির উপায় নয়, তা জীবন-যাপনের প্রণালীও বটে। শিক্ষাকে জীবনব্যাপি অনুসরণীয় প্রক্রিয়া হিসাবে দেখতে হবে এবং অভিজ্ঞতাকে শিক্ষা লাভের স্বাভাবিক কৌশল হিসাবে বিবেচনায় রাখতে হবে। আধুনিক শিক্ষা দর্শনে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিসত্ত্বা বিকাশের উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ব্যক্তি স্বাতন্ত্রবোধ জাগ্রত করা এবং তাকে আত্মসত্তার আস্থাবান করে তোলাই শিক্ষার প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত।
এ স্কুলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে সুপরিকল্পিত পাঠ্যক্রম, সহ–পাঠ্যক্রম কর্মসূচির যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে ছাত্রদের শারীরিক ও মানসিক গুণাবলীর সর্বোচ্চ উৎকর্ষ সাধন যাতে তারা সুনাগরিক হিসাবে গড়ে উঠতে পারে এবং ভবিষ্যতে দেশ ও জাতিকে উপযুক্ত নেতৃত্ব দিতে পারে। অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে এ প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে অভিজ্ঞ, প্রশিক্ষিত ও নিবেদিত প্রাণ শিক্ষকমন্ডলী, অত্যাধুনিক পদার্থ, রসায়ন, জীববিজ্ঞান ল্যাব ও ব্যবহারিক ক্লাস, কম্পিউটার ল্যাব এবং অত্যাধুনিক স্মার্ট ক্লাস রুম। । এ প্রতিষ্ঠানে রয়েছে আধুনিক তথ্য ও বইসমৃদ্ধ লাইব্রেরি; যেখানে পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন বই।প্রতিষ্ঠানটি সম্পূর্ণভাবে রাজনীতিমুক্ত এবং প্রকৃতিগতভাবে সাবলীল একটি প্রতিষ্ঠান।
চাটমোহর সরকারী রাজা চন্দ্রনাথ ও বাবু শম্ভুনাথ মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৬১ খ্রীষ্টাব্দে । প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এই বিদ্যালয়ের রয়েছে বৈচিত্র্যময় ইতিহাস। ১৬২ বছরের প্রাচীনতম এই বিদ্যাপীঠের অনেক বৈচিত্র্যময় কাহিনী কালের স্রোতে বিস্মৃত হয়ে গেছে। হারিয়ে গেছে বহুমূল্যবান কাগজপত্র যা থেকে সংগ্রহ করা যেত বহু তথ্য উপাত্ত। যেটুকু জানা গেছে তা থেকেই তুলে ধরা হচ্ছে এই বিদ্যাপীঠের বৈচিত্র্যময় ইতিহাস। র্পূবেই উল্লেখ করা হয়েছে বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকাল ১৮৬১ খ্রীষ্টাব্দে। এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তির্বিগ এলাকায় একিটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইচ্ছাপোষণ করেন। এই উপলক্ষে একটি সভার আয়োজন করা হয়। তৎকালীন পাবনা জেলার কালেক্টর মহোদয় ( একজন ইংরেজ ) সভায় উপস্থিত ছিলেন। সভা অনুষ্ঠিত হয় র্বতমান বিদ্যালয় প্রাঙ্গনেই। কালেক্টর সাহেব সভায় বলেন বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয় র্অথ কে দেবেন? ঘটনাচক্রে কোন কার্য্যপোলক্ষে পার্শ্বডাঙ্গাঁর জমিদার চাটমোহরে আসেন এবং লোকের সমাগম দেখে তথায় উপস্থিত হন এবং বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রযোজনীয় র্অথ প্রদানের ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। তখন উক্ত সভাতেই অত্র স্থানে পার্শ্বডাঙ্গাঁর জমিদারের নামে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। অতপর বিদ্যালয়ের কাজ শুরু হয়। সে সময় নাটোরের মহারাজা ছিলেন রাজা চন্দ্রনাথ। পার্শ্বডাঙ্গাঁর জমিদার নাটোরের মহারাজার তুলনায় তৃণসমতুল্য অথচ তিনি প্রতিষ্ঠা করলেন অত্র এলাকায় জ্ঞানের আলো বিতরণের জন্য বিদ্যালয়। নাটোরের রাজার সম্মানে আঘাত লাগলো। তাই তিনিও প্রতিষ্ঠা করলেন রাজা চন্দ্রনাথ নামে আর একটি বিদ্যালয় ( বর্তমান যে স্থানে চাটমোহর তহশীল অফিস)। তখন থেকেই শুরু হয় বৈচিত্র্যময় ইতিহাস নাটোরের রাজা যিনি অর্দ্ধবঙ্গেশ্বর উপাধী প্রাপ্ত। সুতরাং তার দাপটে ও প্রতাপে পার্শ্বডাঙ্গার জমিদার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয় যেন প্রিয়মান হয়ে পড়ে।কিন্তু জমিদার শম্ভুনাথ হাতোদ্যম হননি। নাটোরের রাজার প্রবল প্রতাপের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়টি চালিয়ে যেতে থাকেন। এখানে জানা দরকার ২টি বিদ্যালয়ের দূরত্ব ছিল মাত্র এক কিলোমিটার। দুটি বিদ্যালয়ের মধ্যে চলতো তীব্র প্রতিযোগিতায়।ছাত্র শিক্ষক সবাই মিলে এই প্রতিযোগিতায় শরীক হতো। উভয় বিদ্যালয়ের ছাত্রদের মধ্যে মাঝে মধ্যেই সংঘর্ষ হতো এভাবেই চলতে থাকে দুটি বিদ্যালয় পাশাপাশি। দোর্দন্ড প্রতাপশালী নাটোর রাজার লোকজন পার্শ্বডাঙ্গা জমিদার প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয় অগ্নিসংযোগে পুড়িয়ে দেয়। জানা যায় এভাবে উভয় বিদ্যালয়েই প্রায় ৬/৭ বার অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। জমিদার শম্ভুনাথ বাবু হাল ছাড়ার পাত্র নন। তিনি বৈঠক খানা ঘরেও বিদ্যালয়ের কাজ চালাতে থাকেন। বস্তুতঃ পার্শ্বডাঙ্গাঁর জমিদার প্রতিষ্ঠা করেন যেভাবেই হোক তাঁর প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টি চালু রাখতে হবে। তাই তিনি বহু ঘাত প্রতিঘাত,চড়াই উৎরাই পাড়ি দিয়ে বর্তমান স্থানে একটি ইংরেজি ”U” আকারের পাকাভবন নির্মানে হাত দেন। সে সময় নাটোর রাজের অনুমতি ছাড়া কেহ তাঁর এলাকায় ভবনের ছাদ ঢালাই করতে পারত না। বিল্ডিং গাথা শেষ হলে ছাদ ঢালাইয়ের পূর্বে নাটোর রাজার পক্ষ হতে ছাদ ঢালাইয়ের বিরুদ্ধে আদালত কর্তৃক নিষেধাজ্ঞা জারি করার ব্যবস্থা করেন। উদ্দেশ্য ছিল ভবনটি যাতে পুরাপুরি নির্মিত না হতে পারে। পার্শ্বডাঙ্গাঁর জমিদার শম্ভুনাথ বাবু এ খবর জানতে পেরে হাতির পিঠে চড়ে পাবনা সদর গিয়ে নিষেধাজ্ঞাটি একদিন পর জারির ব্যবস্থা করে ফিরে আসেন। অতপর অত্যন্ত দ্রুততার সাথে প্রচুর রাজমিস্ত্রি জনবল দ্বারা এক রাত্রিতেই ছাদ ঢালাই সমাপ্ত করেন। ছাদ ঢালাইযের পর দিনই নিষেধাজ্ঞা আদেশটি পৌছে কিন্তু তার পূর্বেই কাজ সমাপ্ত। হেরে যান অর্দ্ধবঙ্গেশ্বর নাটোর রাজা। এভাবে দ্বন্দ্ব-কলহ রেষারেষি চলতে থাকলে দুটি প্রতিষ্ঠানই বন্ধ হয়ে যেতে পারে কাজেই মীমাংসার উদ্যোগ নেয়া হয়। এ উদ্দেশ্যে তৎকালীন পাবনা জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট ই, জি ক্রিক ও জল পাইশুরির রেঞ্জইনসপেকটর অব স্কুলস মিঃ ব্যানার্জি ১৯২৯ খ্রীষ্টাব্দের ১৪ ই জানুয়ারী চাটমোহর শুভগমন করেন। যেহেতু পার্শ্বডাঙ্গাঁর জমিদারের বিদ্যালয়ই পাকা ভবন নির্মিত হয়েছে সেহেতু দুটি বিদ্যালয় একিভুত করে পাকা ভবনে বিদ্যালয়ের কাজ শুরু করার সিদ্ধান্ত হয়। নাটোরে রাজা নিরুপায় হয়ে এই সিন্ধান্তে রাজী হন।এই ১৪ ই জানুয়ারী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা দিবস হিসাবে পালিত হয়ে আসছে।কিন্তু বিদ্যালয়ের নামকরণ নিয়ে বাধে আর এক ঝামেলা। পার্শ্বডাঙ্গা জমিদার শম্ভুনাথ বাবু দাবী করেন তার স্থানে এবং অর্থনুকুল্যে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত সেহেতু তাঁর নাম প্রথমে খাকবে। অপর দিকে নাটোরের মহারাজার নাম শেষে থাকলে তাঁর আত্মসম্মানের ব্যাপার । সে করণে উভয়েই তাদের দাবীতে অনঢ় থাকেন। বিষয়টির কোন সমাধান না করতে পেরে জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট ক্রীক সাহেব একটা কৈাশল অবলম্বন করেন। তিনি পার্শ্বডাঙ্গাঁর জমিদারকে বলেন “ নাটোরের মহারাজ অত্যন্ত সম্মানিত, তিনি অর্দ্ধ বঙ্গেঁশ্বর তদুপরি তিনি ব্রাক্ষণ সুতরাং ব্রাক্ষণ হিসাবে তাঁকে সম্মান দেওয়া প্রয়োজন।” পার্শ্বডাঙ্গাঁর জমিদার সাহা সম্প্রদায়ভুক্ত সে কারণে এপ্রস্তাবের তিনি কছিুটা নমনীয় হন এবং নাটোর রাজের রাম পূর্বে প্রতিস্থাপনে তিনি সম্মতি দেন। অতঃপর বিদ্যালয়ের নাস করন হয় “চাটমোহর রাজা চন্দ্রনাথ ও বাবু শুম্ভনাথ উচ্চ বিদ্যালয় ” অধুনা সংক্ষেপে চাটমোহর আর,সি এন এন্ড বি এস এন উচ্চ বিদ্যালয়ে উভয়ে (রাজা ও জমিদার) মাসে ১০০+৫০ করে অনুদান প্রদান করতে থাকেন। জমিদার প্রথা উচ্ছেদ হওয়ার পর পাক আমলে বার্ষিক ১২০০/ টাকা এষ্টেট গ্রান্ট হিসাবে পাওয়া যেত। বর্তমান এ সুযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক স্থায়ী মজুরীপ্রাপ্ত ( Permanently recognised) ছিল রাজশাহী শিক্ষার্বোড প্রতিষ্ঠার পর ১৯৬৫ ইং সালে স্থায়ী মঞ্জুরী বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৬১ ইং সালে বিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে অত্যন্ত সাড়ম্বরে শতবর্ষ উৎযাপন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মরহুম ডঃ কাজী মোতাহার হোসেন সাহেব।
পূর্বে বলা হয়েছে বিদ্যালয়ের অনেক মূল্যবান পুরাতন কাগজ পত্র হারিয়ে বিনষ্ট হয়ে। গেছে যার জন্য ১৯২৯ সালের পূর্বের কোন প্রধান শিক্ষকের নাম সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। যতদূর সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে তার তালিকা প্রদান করা হল।১৮৬১ সাল থেকে ১৯২৭ সাল পর্যন্ত জানা যায়নি ।
Lorem ipsum dolor sit amet, consectetur adipiscing elit. Ut elit tellus, luctus nec ullamcorper mattis, pulvinar dapibus leo.